উত্তমকুমার অমলাদি মৃণাল সেন
পরিব্রাজক লেখক ও সাংবাদিক
অমলাদিকে আবদার করাতে উনি লিখে দিলেন।
অমলাদি, মানে অবশ্যই অমলাশঙ্করের কথা বলছি। আমি ওঁকে এই নামেই ডাকতাম।
জুলাই-এর ২৪ তারিখ অমলাদির প্রয়াণের খবর পেয়ে চিঠিটা বের করে দেখছিলাম।
বছর কয়েক আগের কথা।
আমি তখন ‘বর্তমান’ খবরের কাগজে কাজ করি। সেখানে রবিবারের ক্রোড়পত্রে ওঁর ধারাবাহিক চলছে। অমলাদির সাক্ষাৎকার নিয়ে লেখা তৈরির ভার আমার ওপর।
![]() |
‘বনপলাশীর পদাবলী’ |
সেই কারণেই মাঝে মাঝে ওঁর বাড়িতে যেতাম। উনি তখন ‘জয়জয়ন্তী’ আবাসনে থাকতেন। গড়িয়াহাটার মোড়ে।
একদিন কথায় কথায় উত্তমকুমারের প্রসঙ্গ উঠল। উত্তমকুমারের সঙ্গে তো ওঁর অত্যন্ত ভাল সম্পর্ক ছিল! মহানায়ক ওঁকে ‘দিদি’ ডাকতেন।
তো, প্রসঙ্গটি হল, উত্তমকুমার সেই সময়ে ‘বনপলাশীর পদাবলী’ ছবি করবেন। অমলাশঙ্করের মেয়ে, আজকের সুপরিচিত অভিনেত্রী-নৃত্যশিল্পী মমতাশঙ্কর তখন নেহাতই ছোট। স্কুলে পড়ে। উত্তমকুমার চেয়েছিলেন মমতাশঙ্কর যাতে ওঁর ছবিতে অভিনয় করে। সে কথা একদিন অমলাদিকে বললেন তিনি।
অমলাদি রাজি হননি। বলেছিলেন, এখন পড়াশুনো করছে ও। তাই-ই করুক। পড়া শেষে নয়, যা করার করবে।
![]() |
‘মৃগয়া’ |
সে দিন এই সব ঘটনার কথা শুনতে শুনতে আমার মনে হয়েছিল, এ তো অসম্ভব গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক একটি তথ্য! তা’ও আবার বলছেন অমলাদি। এটা উনিই যদি নিজের হাতে লিখে দেন, তার একটা আলাদা গুরুত্ব থাকবে।
ওঁকে বলতেই উনি লিখে দিয়েছিলেন।
নীচে ওঁর সেই লেখাটা দিলাম। একদম শেষের ছবিতে অমলাদির হাতের সেই লেখা।
একটা রুলটানা কাগজে অমলাদি লিখেছিলেন—
উত্তম আমাকে বললেন, ‘‘দিদি ‘বনপলাশীর পদাবলী’-তে মমতাকে অভিনয় করতে দিন।’’
মম তখন স্কুলে পড়ছে। তাই সিনেমা অভিনয়ের কথা ভাবিনি।
মৃণালবাবুর ‘মৃগয়া’ ছবিতে মম প্রথম অভিনয় করল। এই ছবিতে প্রথম অভিনয় করেছিল পুণা ফিল্ম ইনস্টিটিউট থেকে পাস করা কলকাতারই ছেলে মিঠুন চক্রবর্তী।
এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, ‘মৃগয়া’য় সাঁওতাল ছেলে ঘিনুয়ার চরিত্রে অসাধারণ অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতার জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিল মিঠুন।
মমর ব্যাপারে একটু বলি।
মমর অভিনয়ের প্রথাগত কোনও শিক্ষা ছিল না। তবে ওর স্বতঃস্ফূর্ত অভিনয়ের দিকটা ওর বাবার কাছ থেকেই পেয়েছে। তাই শঙ্কর (উদয়শঙ্কর) যখন ওর মৃগয়া-য় অভিনয়ের কথা শুনেছিলেন— ওকে প্রাণভরে আশীর্বাদ করেছিলেন।
![]() |
শ্যুটিং ফ্লোরে মৃণাল সেন |
মমতা যে সিনেমা করবে, এই কথাটা কোনওদিন ভাবিনি। মৃণালবাবু যখন ওকে বেছে নিলেন ‘মৃগয়া’র জন্য, তখন একজন মা হিসেবে স্বাভাবিকভাবে মৃণালবাবুকে বলেছিলাম, কার সঙ্গে অভিনয় করছে, শ্যুটিং শুরু আগে তাকে একবার দেখতে চাই। আমি ও আনন্দ (আনন্দশঙ্কর) ‘হ্যাঁ’ করার পরই মৃণালবাবু শ্যুটিং শুরু করেন। মিঠুনের বাইরেটা দেখে যতই মডার্ন লাগুক কিন্তু তার সঙ্গে আলাপ হয়ে কথাবার্তা বলার পরেই বুঝতে পারলাম— অতি সহজ সরল প্রাণবন্ত একটি ঘরোয়া ছেলে। তার অমায়িক ও শ্রদ্ধাশীল ব্যবহার
—অমলাশঙ্কর
লেখাটি আবার করে পড়তে গিয়ে অনেক কথা মনে পড়ে গেল।
আর একটা ব্যাপার ভেবে খুব অবাক লাগছে, অমলাদি যেদিন চলে গেলেন তার তারিখটি হল জুলাইয়ের ২৪।
১৯৮০ সালের এই দিনটিতেই চলে গিয়েছিলেন অমলাদির অন্যতম প্রিয়জন, তামাম চলচ্চিত্রপ্রেমী যাঁকে চেনে ‘মহানায়ক’ বলে।
তিনি উত্তমকুমার।
![]() |
প্রতিবেদকের কাছে রাখা অমলাশঙ্করের লেখার খসড়া |
Ashamvom Sundar EKTA lekha. Pore samridhha holaam
ReplyDelete