সমাধিক্ষেত্র থেকে পাহাড় হয়ে কবিদের আশ্চর্য বিশ্ব পরিক্রমা
লেখক-সাংবাদিক, নিউ-মিডিয়া আর্টিস্ট
শীত-পার্ক স্ট্রিট-দার্জিলিং। নস্টালজিয়া-বিশ্ববোধ-বাস্তবতা। নানা ব্যক্তিত্ব জানাচ্ছেন তাঁদের অভিজ্ঞতা। অলোকরঞ্জনবাবু চলে যাওয়ায়, মাঝে দু’দিন স্তব্ধ ছিল এই ধারা। আজ আবার পার্ক স্ট্রিট সিমেট্রির কবি সম্মেলন থেকে তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপনা হয়ে লেপচাদের প্রত্যন্ত গ্রামে বিশ্ববোধের ধারণা খুঁজে পাওয়ার কথা জানালেন কবি ও অধ্যাপক অভীক মজুমদার। শুনলেন দেবর্ষি বন্দ্যোপাধ্যায়
সত্তরের পর আপনাদের, নব্বইয়ের কবিদের মধ্যে স্পর্ধার একটা দ্বিতীয় তরঙ্গ এসেছিল। প্রবীর দাশগুপ্ত, অচ্যুত মণ্ডল, জয়দেব বসু আপনার বন্ধুবান্ধব। প্রত্যেকেই বোহেমিয়ান। প্রত্যেকেই যেন একটু অন্য রকম, তাঁদের কবিতার মতোই, স্রেফ আত্মগত না, কোথাও আন্তর্জাতিক... আপনারা সবাই পার্ক স্ট্রিটের সংলগ্ন সিমেট্রিতে মোম জ্বালিয়ে মধুসূদনের কবরের পাশে কবিতা পড়েছিলেন..ঠিক কী হয়েছিল সেদিন?
জয়দেব, অচ্যুত, প্রবীর আজ বেঁচে নেই। ভাবলে কেমন লাগে! কিন্তু সেদিনের প্ল্যানটা ছিল মূলত জয়দেবের। জানুয়ারি মাস। শীত। মৃণাল চক্রবর্তী নামের আরেক কবিও ছিলেন। ওঁদের সঙ্গে আমরা সবাই। আরও অনেকে ছিল সেদিন। অভিজিৎ বসু ছবি তুলছিলেন, কবি ঋজুরেখ চক্রবর্তীও ছিলেন, ছিলেন কবি বিশ্বজিৎ পন্ডা, কবি সুমিতাভ ঘোষাল। বাংলা কবিতায় ক্লাসিক্যাল ধরন ফিরিয়ে আনা যায় কি না, এ নিয়ে আমাদের আলোচনা হত। সেদিনও তাই হচ্ছিল। সে সুবাদেই মধুসূদনকে নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল কবরের পাশে। আট থেকে নয়ের দশকে বাংলা কবিতার ব্যক্তিগত যাত্রার অভিমুখ লক্ষ করা যাচ্ছিল।
![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjo3BNQ3X4ZL0P2h6c8JdoS0CA2AwjKdpWQFgBzdHapGFS_HTV2kgYZgbmkBxfm9bKN_Z5TwzrCOdq2Y4ITcxsRfqdLLQnpjXZPgaSIpTe6Wk5ucAcNFBBM-hTHVzLQCG1GioFhGO7Tlk0/s320/Cemetery.jpg) |
পার্ক স্ট্রিটের সমাধিক্ষেত্র |
কবিতায় লিরিক্যাল মেজাজে ছোট ছোট চেহারা বেশি ধরা পড়ছিল। এটাকেই আমরা ভাঙতে চাইছিলাম। সেখান থেকে বেরিয়ে আমরা বড় পটভূমিকার কবিতা লেখা যায় কি না, তা নিয়ে নানা তর্ক-বিতর্ক করতাম। সেদিনও তাই হয়েছিল। গোরস্থানের গার্ডকে রীতিমত মদের বোতল ঘুষ দিয়েছিল জয়দেব। তারপর আমরা ঢুকে পড়েছিলাম ভেতরে। গার্ড বুঝতে পারছিলেন না, অন্ধকারে আমরা কী করতে চাইছি! ভাবছিলেন, কবরে ফুল দিতে এসেছি হয়তো!...(হাসি) তারপর, সেদিনের সন্ধায় জয়দেব কবরের পাশে বসেই বলল, অশরীরীদের উদ্দেশ্যে আমাদের প্রথমে মদ উৎসর্গ করতে হবে। না’হলে ওঁরা আমাদের ঘাড় মটকে দেবে! হেনরিয়েটা, মাইকেল-কে শ্রদ্ধা জানিয়ে আমরা মোমবাতির আলোয় কবিতা পড়া শুরু করলাম। শীতকাল বলেই সাপের উপদ্রব ছিল না। এমন ঘটনা সত্যিই বিরল! অচ্যুত সেদিন ছিল না। শিলিগুড়িতে ছিল। কত বন্ধু ছিল সেদিন! শঙ্খবাবুর একটা কবিতা মনে পড়ছে, এক দশকে সঙ্ঘ ভেঙে যায়...সবাই এদিক ওদিক সত্যিই আজ ছড়িয়ে গেছে..তবু এই স্মৃতি আজও উজ্জ্বল..
![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjwEt7tzT_tyg0r1BEFsFL7Q8HIrkvG1MS5k10X5PJMxuZsXLuPHgc-9i2HE5EjfliV9pbaS_7YCNvwcda0DTN05op3O6Nk8yooayCmIX3R0PqXEvpGmK9_caCCGgLFOTq8UFXcc0KZXAY/w307-h532/Madhusudan+dutta.jpg) |
মধুসূদন দত্ত |
তো, প্রবীর আমাদের কাছে একটা ঘটনা হয়েই এসেছিল প্রায়। তখন ও কম্প্যারেটিভ পড়ে। কফি হাউসে অচ্যুতের সূত্রে আমার আলাপ হয় ওঁর সাথে। প্রবীর কলকাতায় বড় হয়নি। তাই মফস্বলের স্বপ্নবাস্তবতা নিয়ে ও কলকাতায় এসেছিল। সে জাদু-বাস্তবতার হদিস আমরা, যারা কলকাতায় বড় হয়েছি, তাদের হাতে ছিল না। জয়দেব ছিল সিনিয়র। কিছুটা প্রতিষ্ঠিত। জয়দেবের কবিতার দুনিয়া আমাদের তা’ও চেনা ছিল। যদিও রাজনীতির সাথে ব্যক্তি বাস্তবতার মিলে একটা নতুন জগৎ খোঁজার চেষ্টা করছিল জয়দেব। কিন্তু প্রবীরের ভাবনাচিন্তা ছিল একেবারে আলাদা। আমাদের প্রভাবিত করছিল সেটা। আমরা তত্ত্ব দিয়ে ওঁকে বুঝতে পারছিলাম না। সেটা বড় কবিকে বোঝার রাস্তাও না। প্রবীরের কবিতায় তারকভস্কির ‘স্যাক্রিফাইস’ ছবি থেকে ইমেজ পাওয়া যেত। আমরা বলতাম, এটা তুমি কীভাবে আনলে? ও নানা কথা বলে ম্যানেজ করার চেষ্টা করত। কিন্তু এটা কোথা থেকে যে ঘটছে, সেটা কিছুটা অজানা বলেই বড় কবিরা রহস্যময়। ওঁর বিখ্যাত কবিতা ‘পিন্তানিনা সান্তামারি’..এই নামটা কোথা থেকে পেল! কলম্বাসের তিনটি জাহাজের নাম ছিল এটা। এবং এ কবিতা প্রায় ঔপনিবেশিকতার ভিত্তিভূমিকে ধরে নিয়েছিল না জানিয়েই..
পার্ক স্ট্রিটের কবরস্থান থেকে যাদবপুরের তুলনামূলক সাহিত্যের অধ্যাপনা। শহরের ভেতরে থেকেই আরেকটা আন্তর্জাতিক কানেক্ট..
হ্যাঁ। বাড়িতে ছেলেবেলা থেকেই সাহিত্যের একটা হাওয়া ছিল। সাহিত্যপত্র প্রকাশিত হত বাড়ি থেকে এককালে। দেবেশ কাকা (রায়) প্রায়ই আসতেন। বাবা (আশিস মজুমদার) অনুবাদ করতেন। ফরাসি জানতেন বাবা। ব্যোদলেয়র অনুবাদ করছেন। ইয়েটসের কবিতা অনুবাদ করছেন। বেঞ্জামিনের জরুরি প্রবন্ধ অনুবাদ করছিলেন। রিলকের লেখা পড়ছেন আর আমি হাংরি আর কৃত্তিবাসে মজে আছি সে বয়সেই! ফলে আর্তো, গিন্সবার্গের নামও ঢুকে পড়ছে। নামগুলো ভেতরে ঘুরছেও। এরপর শঙ্খবাবুর সঙ্গে আলাপ যাদবপুরে গিয়ে। জীবনের মোড় ঘুরে গেল হঠাৎ। সাধারণ ভাষায় অনেক কথা বলে দিতেন তিনি। এই আলাপটাও হয়েছিল জয়দেবের মাধ্যমে। আমার ইন্টারভিউ নিলেন একদিন শিশিরকুমার দাশ। পিলে চমকে গেল আমার! দেড় ঘন্টা ধরে আমার ইন্টারভিউ নিলেন। আমি সুযোগ পেলাম পড়ানোর। পড়াতে শুরু করলাম তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগে। চৌবাচ্চার তেলাপিয়া বঙ্গোপসাগরে পড়ল। এবং সাঁতার কাটা শুরু করলাম। তখন বাঘ-সিংহ ঘুরে বেড়াচ্ছে সব বিভাগে। মানববাবু (মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়), নবনীতাদি (দেবসেন), অমিয় দেব, শিবাজীদা (বন্দ্যোপাধ্যায়), সুবীর রায়চৌধুরী, স্বপন মজুমদার। প্রথম দিকে ভয় করত বিভাগে যেতে। শিবাজীদা প্রায়ই বলতেন, ‘‘সেকি! এটা পড়োনি! কাল এটা পড়ে আসবে।’’ মানববাবুর ধরনটা ছিল একটু আলাদা, ‘‘এটা পড়োনি কেন! আচ্ছা কাল এনে দেব।’’ নবনীতাদি একদিন মাপলেন, তারপর একটা অদ্ভূত সুন্দর সম্পর্ক তৈরি হয়ে গেল। মানববাবু, শিবাজীদার বাড়ির আড্ডায় গিয়ে বিশ্বটা ক্রমশ কাছে চলে আসতে লাগল। লাতিন আমেরিকা, আফ্রিকা, ইতিহাস-ভূগোল সব একাকার হতে থাকল..
![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgVi1csiwLIz7q1QRcBX6pTAJH7Cv3OxdcMh8WAQP5Hn563cMvn8jZgezfhIEiC1REDchphI-gAKQ5D_nAriNZ7ophzimd5ekYTtXqAkMSr4MCkrrV30Bsick9Fd-Lv2QlmqAUFv9NV8-o/s320/jadavpur+university.jpg) |
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় |
বিশ্বের ধারণা আপনার কাছে বদলালো..
৯৬ সালের পর থেকে এটা ঘটল। কালিকাপ্রসাদের সঙ্গে আলাপ হল আমার সে’বছর। আমার ছাত্র হিসেবে এল কালিকা। অথচ আমি ওঁর মধ্যে লোকায়ত বিশ্বকে বিন্দুতে সিন্ধু হিসেবে পেলাম। কালিকা হয়ে উঠল আমার আরেক জানলা। আমাদের বাড়িতে রেকর্ড ছিল প্রচুর। বাবার। ভীষ্মদেব চট্টোপাধ্যায়, ফৈয়াজ খান, আমীর খান, করিম খান সাহেবের রেকর্ড-সহ আরও অনেক রেকর্ড। নজরুল-রজনীকান্ত-বাংলা আধুনিক গান। কালিকা এসে এই জগৎটা আবার জাগিয়ে দিল বুকে। আমাদের বাড়িতেই থাকত চার বছর ও। এখানেই ‘দোহার’ তৈরি হল। এ ভাবে বাউল, ফকির, তন্ত্র, দরবেশ, চিস্তি-তাঁদের আখড়ায় নিয়ে গেল, তাঁদের সাধন বিশ্ব— সে সুবাদে রবীন্দ্রনাথ, এ নিয়ে আমার আর কালিকার রাতের পর রাত আলোচনা-আমায় পূর্ণ করল। কারণ পাশ্চাত্যের বাইরের এই অন্য দুনিয়ার এই যে হদিশ, যেখানে দূরবীন শাহর গান, রাধারমণের গান, কর্তাভজা সম্প্রদায় কোন ধর্মীয় তত্ত্বের কথা বলে, বৌদ্ধতন্ত্র কী— এইসব মিলে একটা পূর্ণতা পেল আমার বিশ্ব ধারণা..
আমার শুনতে শুনতে মনে পড়ছে রবি ঠাকুরের কুষ্টিয়া গিয়ে লালনের খাতা পাওয়া। সেখান থেকে ম্যান অফ দ্য হার্ট লেকচার..
হ্যাঁ। এর আগে কিন্তু রবি ঠাকুরের গানে পাশ্চাত্য প্রভাব বেশি। এরপর থেকে ওঁর সুরে কিন্তু মাটির সুর। কালিকার সঙ্গে এসব নিয়ে তর্ক হত। বাউল ভিখিরিদের গানে, মনসুর বা করিম শা-র যে দর্শন বা তত্ত্ব তা আমায় ক্রমশ আলোড়িত করল। ‘আরশিনগরের পড়শি’ কে? ‘মনের মানুষ’ কে? এ জায়গাটা... মহীনের সান্নিধ্যে আমি বাউল সঙ্গ করেছি, কিন্তু এ জগৎ অজানা ছিল। মহীনের কথায় মনে পড়ছে, কলেজ স্ট্রিটের হিন্দু হোস্টেলের রাস্তায় একটা দোকান ছিল ‘কাগজের বাঘ’। দীপক মজুমদার, হিরণদারা এ দোকান তৈরি করেছিলেন। ওঁরা গান করতন। আমি চলে যেতাম সে টানে। যাদবপুরে আমার সঙ্গে কৌশিক (গাঙ্গুলি), চূর্ণীরা পড়ত। আমার এক ব্যাচ আগে ছিল লাল (সুমন মুখোপাধ্যায়), বাদল সরকার। কিন্তু বন্ধুত্ব বেশি ছিল কফি হাউসের অচ্যুত-প্রবীর-ব্রাত্য-তন্ময় মৃধাদের সঙ্গে। আমরা নানা তর্ক করতাম। একদিন লেখা দেখাতে এল দুটো বাচ্চা ছেলে। বাপ্পাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায় আর সার্থক রায়চৌধুরীরা..অভীক বন্দ্যোপাধ্যায়, সুমন্ত মুখোপাধ্যায়রাও এসে জড় হল। তো, বাঘের বাচ্চার সেই দোকানের ফুটপাতের আলোয় জীবনানন্দের জন্মদিন পালিত হল। বুড়োদার চায়ের দোকানের পাশের ফুটপাতে। সেখানে কবিতা পড়েন এসে শঙ্খ ঘোষ, শৈলেশ্বর ঘোষ। সেখানেই আসতেন দীপক মজুমদারও। ল্যাডলি মুখোপাধ্যায় আয়োজন করেছিলেন এই অনুষ্ঠানের। দীপকদা নানা কথা বলতেন। গান গাইতেন, ও চাঁদ চোখের জলে লাগল জোয়ার...। দুনিয়ার নানা কবিদের কথাও বলতেন। ওদিকে যাদবপুরে লাতিন আমেরিকা, আফ্রিকার পাঠ ক্রমশ বাড়ছে। এবং সে পাঠ তছনছ করে দিচ্ছে অ্যাদ্দিনের সুন্দর পাশ্চাত্যের নির্মল ধারণা...
![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhRyaJFcPq4No3TKuQsReeV8HTiFBd_24a7GXJAxfpZs2LPumZCxggpS9ezIhrf6hTLav0WO0WgcGBg21k5zDQ8_P0iKKN7lYD4aen0sA_zL9yE_jcX4d6bDmZtuWE-gm5CBqqntHL8Zo8/s320/Majar+of+Lalan.jpg) |
কুষ্টিয়ায় লালন শা-র মাজার |
আজ প্রত্যন্ত পাহাড়ের গ্রামের স্কুলের একেবারে সাধারণ স্তরের পাঠ্যবই নির্ণয় থেকে রোজকার জীবনের দেখভালের সাথে আপনি জড়িয়ে পড়েছেন পেশা সুবাদে। এ’ও তো এক রকম দুনিয়া দেখা, যে বিশ্ববোধ পার্ক স্ট্রিটে তৈরি হয়েছিল যৌবনে, তাই তো যাদবপুর তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপনার হাত ধরে আজ একটা ফুলসার্কেল পূর্ণ করল..
অবশ্যই। পাহাড়ের কথা উঠল...সে প্রসঙ্গে বলব, কার্শিয়াং-ক্যালিম্পং-র প্রত্যন্ত গ্রামের বাচ্চাদের রোজকার খবর নিতে হয় আমায়। পেশার তাগিদ হলেও আলাদা মমত্ব বোধ করি। আমরা এতকাল কতটা ওদের নিজের বলে ভেবেছি? ভাবিনি, সেই পাপ মাথায় করেই যাই ওদের কাছে। ওঁরা আমায় নিজের লোকই মনে করে। স্কুল পরিদর্শন করা, নানা দরকারে পাশে থাকতে থাকতে ওরা অজান্তে জীবনের ভেতরেই ঢুকিয়ে নিয়েছে আমায়। আর আলাদা বলে ভাবে না। অনেক প্রত্যন্ত গুম্ফা, সিকিমের সীমান্তবর্তী এলাকার পাহাড়ি গ্রামের প্রাইমারি স্কুলের বাচ্চাদের সঙ্গে কথা বলা— নানা ভাবে তাঁদের সমস্যা শুনতে চেষ্টা করি। উল্লেখ্য, কিছু বছর আগে, লেপচা লোকসঙ্গীত ও লোককথার অনুবাদ করি আমরা, যাদবপুরের অনুবাদের বিভাগ (সেন্টিল) এ। ওটাই প্রথম লেপচাদের প্রাইমার..ফলে ওখানকার সম্মাননীয় এক ব্যক্তি তামসাংদা আমায় ভালোবাসেন খুব।
![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhZ9Kp_w1Zbn-9YhKrpg950l1VtbaJGk3xgV0PKNhCUp4BM4Ra8eXE1NOcBGZceg2TXAvmtFX4XzS1gI-iJhzbae_IHh-onbe_DC20ymT0JUALYBsi82qRGsRKD1nqg3uor7-RDpIoMLkE/s320/karseung.jpg) |
পাহাড়ের কোলে কার্শিয়ং-এর গাঁ |
লেপচাদের গ্রামের গোষ্ঠীজীবন আমরা সরেজমিনে দেখেছি। অসামান্য সম্বর্ধনাও দিয়েছে ওঁরা ক্যালিম্পংয়ের টাউন হলে। রবি ঠাকুর ওখানে ভাষণও দিয়েছিলেন। ওঁদের ভাষার একটি গল্প আমাদের সিলেবাসে ক্লাস ফাইভের পাঠ্যও করা হয়েছে। ওঁরা কিন্তু চায় একটা বড় প্রেক্ষিত। বড় আকাশ। সেখানেই আমার জীবনে তর্জমা আর শুধু তর্জমা থাকল না। জীবনের সঙ্গে এক হয়ে গেল। আমি তো নানা ‘প্রান্তিক’ কবিদের আজীবন অনুবাদের চেষ্টা করেছি। জীবনের এই পর্বে এসে সেটাই আমার জীবনের সাথে একাকার হয়ে গেল শেষবেশ এভাবে। এ বড় আনন্দের। দার্জিলিং বা পার্ক স্ট্রিট কোনও জনপদই আমার কাছে স্রেফ ঘুরতে যাওয়ার জায়গা না। আমার শরীরের অনিবার্য অংশ। আমি হয়তো এখনও বিদেশের অত্যাশ্চর্যতার স্বাদ পাইনি, কিন্তু লেপচা গ্রামের এই অত্যাশ্চর্যতার ছোঁয়া ক’জন পেয়েছেন কলকাতায়? বিদেশ তো আসলে একটা ধারণা..অচেনা পরিসরের সঙ্গে আমার সম্পর্ক। সেই ‘অচেনা’ তো উত্তরবঙ্গের অজানা জনপদও হতে পারে। তাই পাহাড় বা পার্ক স্ট্রিট আমার কাছে অচেনার সঙ্গে অনুভূতির একটা জরুরি কানেক্ট। এখানেই ঘরের পাশে আরশিনগর কথাটার মানে খুঁজে পেলাম আমি এই জীবনে। এবং অবশ্যই খুঁজে পেলাম আমার কবিতায়...
দুর্দান্ত
ReplyDeleteঅসাধারণ ! এমন প্রয়াস এই প্রজন্ম কে ভাববার অভ্যাস তৈরি করাবে ! 👍
ReplyDeleteThank you so much
Delete