![]() |
| মনে রাখবেন গাব্বার সাফল্য ক্রিকেট-পিতা রাহুল দ্রাবিড়ের জন্যও |

সুপ্রিয় মুখোপাধ্যায়
ক্রীড়া সাংবাদিক
গিফট্ অফ গাব্বা পাওয়ার পর প্রথমে একটা কথাই মনে এল।
রাহুল শরথ দ্রাবিড়ের একটা মর্মর মূর্তি স্থাপন করা হোক!
‘ক্রিকেট সেন্টার’-এর একেবারে প্রধান ফটকের মুখে।
ইন্ডিয়ান ক্রিকেটের সদর দফতর!
‘ক্রিকেট সেন্টার’ কোথায়, সেটা হয়তো অনেকেরই জানা।
হ্যাঁ, মুম্বইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামের ভেতরে।
এমন কথায় অনেকেই হয়তো ভ্রূ তুলবেন।
বলবেন, পূর্ণ শক্তির অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে রাহানে অ্যান্ড কোং-এর অত্যাশ্চর্য টেস্ট সিরিজ জয়ের সঙ্গে রাহুল দ্রাবিড়ের কী সম্পর্ক!
আমার কাছে, উত্তরটা কিন্তু সোজাসাপটা।
ব্রিসবেনে চিরস্মরণীয় টেস্ট সিরিজ জেতা ভারতীয় ক্রিকেট দলের তরুণ ব্রিগেডের প্রতিটি সন্তানের ক্রিকেট-পিতার নাম রাহুল শরথ দ্রাবিড়।
![]() |
| মূল নায়ক কিন্তু এই মানুষটাই |
আজ্ঞে হ্যাঁ।
ওয়াশিংটন সুন্দর, শার্দুল ঠাকুর, থাঙ্গারাজু নটরাজন, মহম্মদ সিরাজ, শুভমান গিল কিংবা নভদীপ সাইনি, ঋষভ পন্থের ছোটবেলার কোচ যাঁরাই হোক না কেন, ওদের প্রত্যেকের গনগনে আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ডের ক্রিকেটার হয়ে উঠে বিদেশের মাঠে গর্জনের পিছনের প্রকৃত গুরু দ্রাবিড়।
২০১৬ থেকে ২০১৯।
এই গোটা সময় জুড়ে হেড কোচ থাকাকালীন এই তাজা রক্তগুলোকে প্রথমে ভারতের অনূর্ধ্ব ১৯ দলে ও পরের ধাপে ইন্ডিয়া ‘এ’ টিমে দেশেবিদেশে একের পর এক আন্তর্জাতিক সিরিজ ও টুর্নামেন্টের তপ্ত কড়াইতে ফেলে একেকটা ক্রিকেট-হিরে তৈরি করে জাতীয় সিনিয়র ক্রিকেট দলের সত্যিকারের যোগ্য করে তুলেছেন দ্রাবিড়ই।
বেঙ্গালুরুর ন্যাশনাল ক্রিকেট অ্যাকাডেমি বা এনসিএ-র ডিরেক্টর অফ ক্রিকেট অপারেশনস্ রাহুল দ্রাবিড়কে এরপর ভারতীয় ক্রিকেটের অন্তরালের ‘নিঃশব্দ সেবক’ বললে, মনে হয় না বাড়াবাড়ি হবে।
গাব্বার বাইশ গজ অস্ট্রেলিয়ায় বরাবরের দ্রুততম ও ভয়াবহ বাউন্সি পিচ।
যেখানে গত তেত্রিশ বছর কোনও টেস্ট ম্যাচ হারেনি ব্যাগি গ্রিনরা।
আর ভারত হাফ-ডজন টেস্ট খেলে একটা কোনওক্রমে ড্র রাখা ছাড়া বাকি পাঁচটাই হেরেছিল। এহেন একটা চরম প্রতিকূল ভেনুতে দলের শ্রেষ্ঠ ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলি ও গোটা প্রথম বোলিং লাইন-আপকে (বুমরা-শামি-উমেশ-অশ্বিন-জাদেজা) নানাবিধ কারণে মাঠের বাইরে রেখে খেলে ম্যাচ জিতে সিরিজটাই পকেটে পুরে ফেলে অজিঙ্ক রাহানের ভারত।
তা’ও কী? পঞ্চম তথা শেষদিনের পিচে তিনশো’র বেশি রান তুলে।
এরপর ডন ব্র্যাডমানের দেশে ভারতের এই টেস্ট সিরিজ জয়কে অলৌকিক বললে কি ভুল হবে?
অথবা এটাকেই ভারতীয় টেস্ট ক্রিকেটের দীর্ঘ ৮৯ বছরের ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ সিরিজ জয় বললেও বা কী অত্যুক্তি হবে?
হ্যাঁ, তুলনা আসবে। এবং সেটাই স্বাভাবিক।
যেমন এখনই মাথায় এসে পড়ছে একে-একে ১৯৭১-এ ইংল্যান্ড সফরে ওভালে ভারতের ঐতিহাসিক টেস্ট সিরিজ জয়।
১৯৭৬-এ পোর্ট অব স্পেন। চতুর্থ ইনিংস। সে সময়ের সর্বাধিক রানের টার্গেট ৪০২ তাড়া করে বিশ্বরেকর্ড সহ ভারতের টেস্ট জয়।
’৮১-তে মেলবোর্নে গ্রেগ চ্যাপেলের অস্ট্রেলিয়াকে মাত্র ৮৩ রানে মুড়িয়ে দিয়ে ভারতের স্মরণীয় টেস্ট জেতা।
২০০৩-এ অ্যাডিলেডে স্টিভ ওয়া-র অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংসে সাড়ে ৫০০-র ওপর রান তোলার পরেও সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের ভারতের অকল্পনীয় টেস্ট জয়।
এমনকী লর্ডসের সেই ১৯৮৩ সালের ২৫ জুনের মহা ঐতিহাসিক রাত।
কপিল'স্ ডেভিলসের বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্মরণীয় অধ্যায়।
কিন্তু না।
এর একটাও ১৯ জানুয়ারি ২০২১-এর ব্রিসবেন জয়ের পাশে আমার মতে আসবে না।
খুব কাছাকাছি আসছে কপিলের ভারতের ’৮৩-র বিশ্বকাপ ক্রিকেট ট্রফি।
যেটা ক্রিকেট খেলাটার সাবেকি পাঁচদিনের ফরম্যাট না হয়ে ওয়ান ডে টুর্নামেন্ট হওয়া সত্ত্বেও কপিল ব্রিগেডের ওই অভূতপূর্ব সাফল্য পরবর্তী সময়ে শুধু ভারতীয় ক্রিকেটেরই নয়, গোটা দেশের গোটা ক্রীড়া কালচারটাই পাল্টে দিয়েছিল।
তার ঘাড় ধরে হ্যাঁচকা টানে ভারতীয় ক্রীড়ার অভিমুখকে প্রায় একশো শতাংশ ক্রিকেটমুখী করে দেয়।
যে ট্র্যাডিশন গত ৩৮ বছর অব্যাহত।
খুচখাচ একটা-দুটো সিন্ধু, সাইনা, সানিয়া, মেরি কম, অভিনব বিন্দ্রা, সুশীলকুমার, সুনীল ছেত্রী, সর্দার সিং, লিয়েন্ডার, দীপা কর্মকারের ভারতের নীল জার্সিতে আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনে উজ্জ্বল উদয় ঘটেছে বটে।
কিন্তু তর্কাতীতভাবে গত চার দশক ‘ক্রিকেট’ ১০০ কোটি ভারতবাসীর কাছে ধর্ম।
এমনকী আর্থ-সামাজিকভাবে ’৮৩-র লর্ডস-রাত ভারতবাসীর মননে অন্য সব খেলাকে পিছনে ফেলে ক্রিকেটের ঘাঁটি তৈরি করে দিয়েছে।
যার চূড়ান্ত রূপ কোটি টাকার ক্রিকেট কার্নিভাল আইপিএল।
![]() |
| ’৮৩-র বিশ্বকাপ জয়ের পর মোহিন্দর অমরনাথ ও কপিলদেব।গাব্বার কাছাকাছি আসতে পারে এই সাফল্য |
যদিও এ সবের পরেও ভারতের পরের ওয়ান ডে বিশ্বকাপ জিততে ২৮ বছর লেগেছে। আর নিছক ক্রিকেটীয় স্কিল বিচারেও ২৫ জুন ১৯৮৩ লর্ডসের চেয়ে ১৯ জানুয়ারি ২০২১-এর ব্রিসবেনে ভারতের প্রদর্শন এগিয়ে থাকবে।
আবার ১৯৭১ সালে ওভাল টেস্ট কিংবা ২০০৩-এ অ্যাডিলেড বিজয়কে বলা যায় ভারতীয় ক্রিকেটের একেকটা ব্যতিক্রমী দিন। আচমকা কোনও বোলারের একক বিধ্বংসী পারফরম্যান্সের দুর্ধর্ষ ডিভিডেন্ড। যার ফায়দা লুটেছে টিম ইন্ডিয়া। যেমন ’৭১-এ ইলিংওয়ার্থের ইংল্যান্ড।
ওভালের চতুর্থ দিন ভাল জায়গায় থেকেও দ্বিতীয় ইনিংসে ভাগবৎ চন্দ্রশেখরের (৩৮ রানে ৬ উইকেট) লেগস্পিনের সামনে মাত্র ১০১ রানে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ায় ঐতিহাসিক সিরিজ জয়ের জন্য ২০০-রও অনেক কম রানের টার্গেট পেয়ে ওই টেস্টের শেষ দিন সফল হয়েছিল ভারত।
কিন্তু ইংল্যান্ডের মাটিতে সেই প্রথম টেস্ট সিরিজ জয়ের ‘তাজ’ ভারত তিন বছরের মধ্যে তার পরের ইংল্যান্ড সফরেই নিদারুণভাবে খুইয়েছিল ৪২ অল আউট সহ তিনটে টেস্টেই বিশ্রি হেরে।
চন্দ্রাকে নিয়ে ডেনিস অ্যামিস, ডেভিড লয়েড, কিথ ফ্লেচাররা ছেলেখেলা করে বড় বড় সেঞ্চুরি-ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ছিলেন।
কথায় আছে, ‘তাজ’ মাথায় চড়ানোর তুলনায় সেই ‘তাজ’ মাথায় অটুট রাখা অনেক বেশি কঠিন।
শাস্ত্রীয় (দু'বারই টিম ইন্ডিয়ার হেড কোচ রবি শাস্ত্রী) ভারত কিন্তু উপর্যুপরি দুটো (২০১৮-১৯ ও ২০২০-২১) অস্ট্রেলিয়া সফর থেকে টেস্ট সিরিজ জিতে ফিরল।
১৯৮১-তে সুনীল গাভাসকরের ভারতের মতো ২০০৩-এ সৌরভ গাঙ্গুলির ভারতও অস্ট্রেলিয়া সফরে পিছিয়ে পড়েও জয়ের সরণিতে ফিরে টেস্ট সিরিজ ড্র রেখে দেশে ফিরেছিল।
কিন্তু এবারের রাহানেদের মতো এতটা সসম্মানে মাথা উঁচু করে নয়।
আরে মশাই, এই টিম-ইন্ডিয়া ডনের দেশে এবার প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে সর্বনিম্ন ৩৬ অল আউটের বিরাট লজ্জা সহ হেরে সিরিজে পিছিয়ে পড়ে পরের টেস্টেই জিতে সমতা ফেরায়।
তারপর তৃতীয় টেস্ট দারুণভাবে ড্র রেখে শেষ টেস্ট জিতে নিয়ে অত্যাশ্চর্য ২-১এ ‘বর্ডার-গাভাসকর’ ট্রফিতে নিজেদের শাসন ফের কায়েম করে।
আর রাহানে অ্যান্ড কোং-এর এই অতুলনীয় জার্নির পুরোটাই কোহলির বিরাট ব্যাটের অনুপস্থিতি ছাড়াও ভাঙাচোরা বোলিং লাইন-আপ নিয়ে। সিরিজ জিতে নেওয়া ব্রিসবেন টেস্টে তো রাহানের দলের পুরো প্রথম বোলিং অ্যাটাক লাইনটাই ছিল না।
১৮৫ টেস্ট খেলা বোলিং লাইনআপের জায়গায় মাত্র ৪ টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা সম্বলিত বোলিং আক্রমণ নিয়ে ভারত অস্ট্রেলিয়ার ২০টা উইকেট তুলে নিয়েছে গাব্বায়।
অত্যাশ্চর্য! অলৌকিক!
এ কথা অনস্বীকার্য সৌরভের ক্যাপ্টেন্সির আগে ভারতীয় দলে আঞ্চলিকতাবাদের রমরমা ছিল। গাভাসকর-কপিলও যে তালিকার বাইরে নন। গাভাসকরের অধিনায়কত্বে যেমন মুম্বইয়ের গুলাম পার্কার, সুরু নায়েকের মতো মাঝারি মানের ক্রিকেটার টেস্ট খেলেছেন। তেমনই ক্যাপ্টেন কপিল ব্যর্থ হওয়ার পরেও উত্তরাঞ্চলের অশোক মালহোত্রাকে টেস্ট দলে সুযোগ দিয়ে গিয়েছেন।
অধিনায়ক সৌরভ সেখানে কোনও বিশেষ রাজ্য বা অঞ্চলের তোয়াক্কা না করে অজানা-অনামী তরুণ ইরফান পাঠান, বীরেন্দ্র শেহবাগ, হরভজন সিং, জাহির খান, যুবরাজ সিং এবং কোনও এক মহেন্দ্র সিং ধোনিকে প্রথম সুযোগ দিয়ে ভারতীয় দলে প্রতিষ্ঠিত করার পাশাপাশি সুপারস্টার ক্রিকেটার বানিয়ে তুলেছিলেন।
কিন্তু সেখানেও সৌরভ ভারতীয় ক্রিকেটে প্রথম পুরুষ নন।
সেটা হলেন মনসুর আলি খান পটৌডি।
টাইগার পটৌডি নিজে নবাব হলেও, সে সময় টিমে ফারুখ ইঞ্জিনিয়ার, আব্বাস আলি বেগ, জয়সিমার মতো ক্ষত্রিয় ক্রিকেটারদের উপস্থিতি সত্ত্বেও অধিনায়ক পটৌডি তাঁর দলে মুম্বইয়ের মালির ছেলে একনাথ সোলকার, বেঙ্গালুরুর সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের তরুণ গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথ, হায়দরাবাদের নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের আবিদ আলিকে টেস্ট খেলিয়েছেন।
সাফল্যও পেয়েছেন।
বরেণ্য সিনিয়র ক্রিকেট সাংবাদিকদের কাছে শুনেছি, টাইগার পটৌডিই প্রথম ভারতীয় ড্রেসিংরুমে ‘আমি অমুক রাজ্যের’ বদলে ‘আমরা ভারতীয় দলের’কালচারের আমদানি করেন।
আবার ১৯৭১-এ ওভালের চন্দ্রশেখরের মতোই ১৯৮১-র মেলবোর্নে কপিলদেব আর ২০০৩-এর অ্যাডিলেডে অজিত আগরকরের ব্যক্তিগত ম্যাজিক ভারতের স্মরণীয় টেস্ট জয় এনে দিয়েছিল।
১৯৮১-র মেলবোর্নে অস্ট্রেলিয়া জিততে ১৫০-রও কম রান তুলতে নেমে করসন ঘাউড়ির সেই স্বপ্নের ডেলিভারিতে গ্রেগ চ্যাপেল ‘রাউন্ড দ্য লেগ’ বোল্ড হওয়ার পর টেস্টের শেষ দিন অর্ধেক ফিট কপিল একাই ৫ উইকেট তুলে নিয়ে ভারতকে অভাবনীয় জয় এনে দেন।
২০০৩-এ অ্যাডিলেডের ছবিটাও প্রায় একই। ম্যাচে নিরাপদে থাকা রিকি পন্টিংরা আচমকা আগরকরের মিডিয়াম পেসের সামনে ভেঙে পড়ে ২০০-রও কম রানে অল আউট হয়ে গেলে ভারত মোটামুটি সহজ রানের (২২৯) টার্গেট পেয়ে টেস্ট জিতে নিয়েছিল। ৪১ রানে একাই ৬ উইকেট নিয়ে ছিলেন আগরকর।
যে মহাদাপুটে বোলিং তিনি আর দ্বিতীয়বার করতে পারেননি জাতীয় দলের জার্সিতে।
যার মানে দাঁড়ায় ‘ওয়ান্স ইন এ ব্লু মুন’ পারফরম্যান্স।
![]() | |
| মনসুর আলি খান পটৌডি। টিম কালচার বদলে দেওয়ার প্রথম পুরুষ |
সেখানে রাহানের এই টিম ইন্ডিয়া ধারাবাহিক ভাবে চমকপ্রদ খেলে, আক্ষরিক অর্থে টিমগেম দেখিয়ে, প্রথমে জিতে সমতা ফিরিয়ে, তারপরের ম্যাচ দারুণভাবে ড্র রেখে, চূড়ান্ত লড়াই অভূতপূর্ব ভাবে জিতে টেস্ট সিরিজটাই পকেটে পুরেছে। বিদেশের মাঠে যার দ্বিতীয় উদাহরণ নেই ভারতের সুদীর্ঘ ৮৯ বছরের ইতিহাসে।
’৭৬-এর পোর্ট অব স্পেন জয়?
চতুর্থ ইনিংসে ৪০২ রানের বিশ্বরেকর্ড টার্গেট তাড়া করে বেদীর ভারত টেস্ট জিতেছিল।
গাভাসকর-বিশ্বনাথের অসাধারণ জোড়া সেঞ্চুরি, মোহিন্দর অমরনাথের বুক চ্যাতানো ৮৫ রানের শিটঅ্যাঙ্কর ইনিংস, সব ছিল সেই অনবদ্য জয়ের সৌধ হিসেবে।
কিন্তু পাশাপাশি এটাও বোধহয় মনে রাখা দরকার, ঐতিহাসিকভাবে পেস ব্যাটারির দেশ ওয়েস্ট ইন্ডিজ সেই প্রথম তথা শেষবার একই টেস্টে ম্যাচে তিন-তিনজন স্পিনার খেলিয়েছিল। আর ভারতের ৪০০-রও বেশি রানের চতুর্থ ইনিংসে ১০০-ও বেশি ওভার হাত ঘোরানো সেই তিন ক্যারিবিয়ান স্পিনারের কারও নামও তেমন বিখ্যাত নয়— প্যাডমোর-জুমাদিন-ইমতিয়াজ আলি।
তবে ক্লাইভ লয়েডের দল ওই প্রবল ধাক্কা খাওয়ার পর ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট একটা নিঃশব্দ শপথই নিয়ে ফেলেছিল।
৪ পেসারে খেলা।
রবার্টস-হোল্ডিং-মার্শাল-গারনারের ক্যারিবিয়ান পেস চতুর্ভূজের সেই আগমন বিশ্ব টেস্ট ক্রিকেটে।
যে ট্র্যাডিশন আজও মোটামুটি চলেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজে।
রাহানের ভারতের ব্রিসবেনে জয়ের আরও একটা তাৎপর্য বলতে গিয়ে তুলনায় এসে পড়ছে ১৯৭৯-র ওভালের ভারত-ইংল্যান্ড টেস্ট।
চতুর্থ ইনিংসে ৪৩৮ রানের বিশাল টার্গেট (সেটাও সেসময়ের সর্বোচ্চ টার্গেট) তাড়া করে ভারত মাত্র ৯ রান দূরে (৪২৯ /৮) থেমে গিয়েছিল।
বোথাম-উইলিস-মাইক হেনড্রিক-ফিল এডমন্ডসে গড়া ইংরেজ বোলিং আক্রমণের বিরুদ্ধে গাভাসকরের সেই অমর ২২১ রানের ইনিংস।
এখনও মনে আছে ছাত্রজীবনে শোনা, ভারতের সেই ইনিংসের রেডিয়ো কমেন্ট্রি।
পঞ্চম তথা শেষদিনে হিন্দি ধারাভাষ্যকার বলে চলেছেন, ভারতে এখন অনেক রাত। আপনার পাশের মানুষটা হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছেন। কিন্তু ওকে জাগিয়ে তুলুন। ভারত এক ঐতিহাসিক মুহূর্তের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে!
তবুও ১৯৭৯-র ওভাল এবারের ব্রিসবেনের পিছনে থেকে যাচ্ছে।
সেদিন ভারত অধিনায়ক বেঙ্কটরাঘবন জেতার জন্য কপিলদেবকে চার নম্বরে তুলে এনেছিলেন।
দুর্ভাগ্যবশত কপিল কোনও রান করার আগেই আউট হয়ে যান।
ব্রিসবেনে যেমন রাহানে একই উদ্দেশ্যে পাঁচ নম্বরে নামিয়ে ছিলেন ঋষভ পন্থকে।
এবং পন্থ ৮৯ নট আউট থেকে ভারতের চিরশ্রেষ্ঠ টেস্ট সিরিজ জয়ের মহানায়ক হয়ে থাকলেন।
তারচেয়েও বড় তাৎপর্যের, সর্ববৃহৎ তাৎপর্যপূর্ণ শিটঅ্যাঙ্কর চেতেশ্বর পূজারা সেদিন অর্ধশতরানের পর আউট হন যখন, ভারত ৩২৮ রানের টার্গেট থেকে তখনও বেশ খানিকটা দূরে।
তথাপি রাহানের দল ব্রিসবেনে ড্র-এর জন্য খেলেনি।
অথচ টেস্টটা ড্র থাকলেও বর্ডার-গাভাসকর ট্রফি ভারতের কাছেই রয়ে যেত।
কিন্তু এই ভারত ট্রফিটা নিছক ধরে রাখতে নয়। ফের জিততে চেয়েছে। এবং জিতেছেও।
১৯৭৯-র ওভালে কিন্তু গাভাসকরের অবিস্মরণীয় ডাবল সেঞ্চুরি ইনিংস শেষ হওয়ার পর ড্রেসিংরুমের বারান্দা থেকে অধিনায়ক বেঙ্কট ক্রিজে থাকা ভরত রেড্ডি ও ঘাউড়ি ব্যাটিং জুটিকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, ধরে খেলার। ম্যাচ ড্র-এর ব্যাটিং করার।
এখানেই নিছক ক্রিকেট থেকে জীবনযুদ্ধে উত্তীর্ণ হয়ে গিয়েছে রাহানের টিম ইন্ডিয়া।
যেন প্রবলতম বিপদাপন্ন মনুষ্যজাতিকে ২২ গজ থেকে গভীর এক বার্তা দিলেন পন্থ-সুন্দর-শার্দুলরা! জীবনের সর্বাধিক খারাপ সময়েও কখনও লড়াই ছেড়ো না বন্ধু।
যে লড়াই শেখানো এক পিতার নাম রাহুল শরথ ‘ডিপেন্ডেবল্’ দ্রাবিড়!
![]() |
| ক্রিকেট-পিতা দ্রাবিড়ের সন্তান এরা |





No comments:
Post a Comment