![]() |
আলবেয়র কামু-র উপন্যাস 'দ্য প্লেগ’-এর সারসংক্ষেপ
![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjI5AhfJuaArFboZIuA339f-D2_faOHaKzStotiNwBB_fioXdSifkwQw_XM9IHo9TXFsFcLG13qfbsq90iILPARCiyXDwF-mYl5Bx2lfNIXaSEiRVC6CdDmW40nQz0u3IsjxvouCezHllE/w130-h168/Koushik+Dasgupta+1.jpg)
কৌশিক দাশগুপ্ত
শিক্ষক, লেখক, অনুবাদক
আলজেরিয়া তখন ফরাসি উপনিবেশ।
তারই এক বন্দর-শহর ওরাঁ।
শহরে মড়ক লেগেছে। মহামারী। বিউবোনিক প্লেগের।
সময়টা গত শতাব্দীর চারের দশক।
উপন্যাসের কথক অনামা।
তবে পাঠক ঘটনাক্রমটি দেখেন মূলত ডাক্তার বার্নার্ড রিয়ুর চোখ দিয়ে।
হঠাৎই শহর জুড়ে অসংখ্য মরা ইঁদুর চোখে পড়ে রিয়ুর। দেখতে দেখতেই অসংখ্য ইঁদুর বেরিয়ে আসে প্রকাশ্যে।
ভাঁড়ার, গুদাম, নালা, নর্দমা আর গর্তের অন্ধকার থেকে।
আর মরতে থাকে। হাজারে হাজারে। আতঙ্ক শহরময়।
চাপ তৈরি হয় সরকারের ওপর।
মরা ইঁদুরগুলোকে পুড়িয়ে ফেলার ব্যবস্থা নেয় সরকার।
ইঁদুরের মড়ক তো থামল। কিন্তু তারপরই অন্য বিপত্তি।
ডা. রিয়ুর অফিস বাড়ির কেয়ারটেকার মসিয়ঁ মিশেল।
তিনি বিদঘুটে ধরনের এক জ্বরে পড়লেন।
এবং মারা গেলেন।
চারদিকে দেখা যেতে লাগল একটার পর একটা একই রকমের ঘটনাক্রম।
সহকারী ডা. ক্যাস্তেলের সঙ্গে আলোচনা করলেন ডাক্তার রিউ।
রোগটা বিউবোনিক প্লেগ-ই।
কোনও সন্দেহ নেই।
তাঁরা সরকারকে ব্যবস্থা নিতে বললেন।
চিরকেলে সরকারি গড়িমসি।
মৃত্যুহার লাফিয়ে বাড়তে লাগল। শেষমেষ সরকারকে স্বীকার করতে হল মহামারী শুরু হয়েছে।
শহরের ফটকগুলো তড়িঘড়ি বন্ধ করা হল।
ওরাঁ শহর ঢুকে পড়ল কোয়ারান্টিনের ঘেরাটোপে।
শহরের লোকজনের মনে হতে লাগল তাদের নির্বাসনে পাঠানো হয়েছে। প্রিয়জনদের থেকে দূরে থাকার যন্ত্রণা অসহ্য হয়ে উঠল তাদের। প্রত্যেকেই ধরে নিল তার মতো কষ্টে বুঝি আর কেউ নেই!
ফাদার প্যানেলু। একজন জেসুইট পাদ্রি। গির্জা থেকে বাণী দিলেন, ‘‘এই মহামারী মানুষের পাপের শাস্তি। ঈশ্বরের অভিশাপ।’’
রেমন্ড রেম্বার্ট বলে একজন বিদেশি সাংবাদিক ওরাঁ ছেড়ে পালাবার চেষ্টা করছিলেন।
তিনি প্যারিসে নিজের বউয়ের কাছে ফিরে যেতে চান।
কিন্তু গেরো দু’দিকে।
একদিকে লাল ফিতের ফাঁস। অন্যদিকে যে অপরাধচক্র তাঁকে বের করে নিয়ে যাবে বলে ভরসা দিয়েছে তাদেরকে বিশ্বাস করা মুশকিল।
এর মধ্যে কটার্ড বলে একজন, রেমন্ডকে সাহায্য করতে এগিয়ে এলেন।
তিনি অতীতে কী একটা অপরাধ করেছিলেন, আর সেই থেকে একটা বিদঘুটে ভয় ওঁকে তাড়া করে বেড়ায়। ওরাঁ শহরে একমাত্র কটার্ডেরই প্লেগ নিয়ে কোনও হেলদোল নেই। বরং প্লেগের কারণে আতঙ্ক আর একাকীত্ব যে শেষ পর্যন্ত ওঁরই মতো অন্য সবাইকে কব্জা করেছে, তাতেই উনি বেজায় খুশি। তাছাড়া ওঁর ব্যবসাও চলছে রমরমিয়ে। মানুষ পাচারের ব্যবসা।
এদিকে রিয়ু আপ্রাণ লড়াই চালাচ্ছেন প্লেগের বিরুদ্ধে। তাঁর পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন জাঁ তারু আর জোসেফ গ্রাঁদ।
তারু ওরাঁ-য় বেড়াতে এসেছিলেন। আর গ্রাঁদ হলেন মিউনিসিপ্যালিটির এক বুড়ো কেরানি। প্রাক্তন স্ত্রীকে ভুলতে পারেনি তারু।
গ্রাঁদ সে সময় একটা বই লেখার চেষ্টা করছেন। কিন্তু রোজ অনেক কসরতের পরেও প্রথম বাক্যটাই আর লিখে উঠতে পারছেন না।
তারু স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখার জন্য একটি সংগঠন গড়ে তুললেন।
অনেকে যোগ দিল সেখানে। ভলান্টিয়ার হিসাবে।
এদিকে ততদিনে রেম্বার্ট তাঁর পালানোর প্ল্যান মোটামুটি গুছিয়ে এনেছেন। কিন্তু মুশকিল হল এক জায়গায়।
হঠাৎই তিনি জানতে পারলেন যে, তাঁরই মতো ডা. রিয়ু-ও তাঁর স্ত্রীর থেকে অনেকটা দূরে আছেন। স্ত্রী গুরুতর অসুস্থ। স্যানাটোরিয়ামে ভর্তি।
রেম্বার্ট-এর পালানোর মতলব শিকেয় উঠল। তিনি ঠিক করলেন, ওরাঁ থেকেই লড়বেন প্লেগের বিরুদ্ধে।
![]() |
![]() | |
কেটে গেল অনেকগুলো মাস।
ভুগতে ভুগতে, কষ্ট পেতে পেতে ওরাঁ-র মানুষগুলো ঝেড়ে ফেলছিল তাদের স্বার্থপরতা।
বুঝতে পারছিল এ বিপর্যয় সবার।
অবসাদ আর ক্লান্তি প্রত্যেককে যেন পেড়ে ফেলেছে!
এত বেশি মানুষ মরতে থাকল যে, ঠিক হল মৃতদেহগুলো পুড়িয়ে ফেলা হবে। চিরাচরিত সৎকার-প্রথা না মেনে।
কড়া মেজাজের স্থানীয় ম্যাজিস্ট্রেট মসিয়ঁ অথঁ। তাঁর ছোট ছেলে প্লেগে বিছানা নিল। রিয়ু আর তাঁর সঙ্গীদের চোখের সামনেই সে কষ্ট পেতে পেতে মারা গেল।
শিশুটির মৃত্যু ফাদার প্যানেলুকে ভয়ঙ্করভাবে নাড়িয়ে দিল।
এই সেই ফাদার, যিনি গোড়ায় বলেছিলেন, এ রোগ এসেছে মানুষের পাপের কারণে। এ হল ঈশ্বরের অভিশাপ।
এই মর্মান্তিক ঘটনায় বিধ্বস্ত হয়ে তিনি বাণী দিলেন, প্লেগের বীভৎসতা মানুষের সামনে দু’টো রাস্তা খোলা রাখে। এক হল, খ্রিস্টধর্মে সম্পূর্ণ আস্থা রাখা। নয়তো তার সব কিছু অস্বীকার করা।
অস্তিত্বের সংকট তৈরি করল বিশ্বাসের সংকট।
তারু এবার রিয়ুকে বোঝালেন কী ভাবে তিনি সারাজীবন মৃত্যুদন্ডের বিধানটির বিরুদ্ধে লড়াই করে এসেছেন। লড়াই করে এসেছেন প্লেগের বিভিন্ন রূপের বিরুদ্ধে।
কিছুক্ষণের অবসরে দু’জনে গেলেন সমুদ্রে সাঁতার কাটতে।
তারপর আবার কাজের দুনিয়ায় ফেরা।
গ্রাঁদ পড়ল প্লেগ-এর কবলে, কিন্তু অদ্ভুতভাবেই আবার সুস্থও হয়ে উঠলেন। অন্য রোগীরাও সুস্থ হতে লাগল। তাতে অনেকেরই মনে হল, মহামারী বুঝি পিছু হটছে!
ঠিক তখনই অসুস্থ হয়ে পড়লেন তারু।
রোগের সঙ্গে লম্বা লড়াইয়ের পর হার মানলেন তারু।
কিন্তু সত্যিই বেশিরভাগ মানুষই সুস্থ হয়ে উঠছিল।
আশা ফিরে এল শহরবাসীর মনে।
জয়ের উৎসব শুরু হল।
শুধু কটার্ডের মনেই সুখ নেই একটুও।
যখন শহরের গেটগুলো খোলা হল, কটার্ড তখন বদ্ধ উন্মাদ। এলোপাথাড়ি বন্দুক ছুঁড়ছেন তিনি। তাঁকে গ্রেফতার করা হল। গ্রাঁদ তাঁর প্রাক্তন স্ত্রীকে একটা চিঠি লিখলেন।
তিনি আবার শুরু করলেন উপন্যাসটি নিয়ে বসলেন। ভাবতে লাগলেন প্রথম লাইনটি কী হতে পারে!
রেম্বার্টের বউও স্বামীর কাছে ফিরে এলেন ওঁরা-য়।
শুধু ডাক্তার রিয়ু জানতে পারলেন, তাঁর স্ত্রী স্যানাটোরিয়ামেই মারা গেছেন।
শহরের লোক খুব তাড়াতাড়ি স্বাভাবিক জীবনের ছন্দে ফিরে এল।
কিন্ত রিয়ু সেই স্রোতে সামিল হতে পারলেন না।
স্ত্রীর মৃত্যু তার একমাত্র কারণ নয়।
রিয়ু জানেন, এ লড়াইয়ে জয় ক্ষণস্থায়ী, কারণ এই ‘জীবাণু’ তা যে ধরনেরই হোক, বছরের পর বছর থেকে যায় নিষ্ক্রিয় অবস্থায়।
ফিরে আসতে পারে যখন তখন। যে কোনও রূপে।
লড়াই শুরু করতে হবে তখনও।
আবার। নতুন করে।
অঙ্কনঃ শেখর রায়
'আলবেয়র কামু'-কে নিয়ে আরেকটি লেখা পড়তে ক্লিক করুন এখানে
No comments:
Post a Comment