চপলা দেবীর পিছু পিছু বাড়ির উঠোনে এসে পৌঁছলাম। চারকোণা উঠোনে দাঁড়িয়ে ওপর দিকে তাকালে যেন চকমিলানো বাড়িটার হাহাকার শোনা যায়।নীচ তলার বারান্দাতেও ভাঙ্গন।
শুধু ঠাকুরদালানটুকুই যা শক্তপোক্ত।
তবে সেখানেও আগাছার বাস।
এ বাড়িতে আসার আগে এই বংশের আরও দুই জমিদারের নাম শুনেছি, গৌরসুন্দর চৌধুরী, দ্বারকানাথ চৌধুরী।
গৌরসুন্দরের নাতনি সবিতারানীর সঙ্গে বিয়ে হয় রংপুরের ফনিভূষণ মজুমদারের। সেখানে মজুমদার বাড়ির নামটি ছিল ‘দেওয়ান বাড়ি’। সামনের রাস্তাটার নাম দেওয়ান বাড়ি রোড।
ফনিভূষণের নাতি অমিত মজুমদার, এখন কলকাতায়।
সবিতারানী ছিলেন অমিতবাবুর ঠাকুমা।
অমিতবাবুর কাছে শুনেছি ফনিভূষণের বাবা ছিলেন রায়বাহাদুর রাধারমণ মজুমদার। রাধারমণের বাবা ছিলেন দেওয়ান নৃসিংহ মজুমদার। ইনি নাকি আবার দেওয়ান হন রাজা রামমোহন রায়ের পর।
তার নামেই গ্রাম ছিল নৃসিংহপুর। বহরমপুরেরর আশেপাশে।
গ্রামে প্রায় একশো আশি কাঠা জমির উপর ছিল মজুমদার পরিবারের বসতবাড়ি।
সে অবশ্য অন্য গল্প।
![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEiSxxOVyUWEg-fe0f0E6WxT2hS4b8ODmpCFEvzUsgCpEZHqP3fAkJaag0IaK_8YOs_o8YmtUxoc03GoX62iTXNmhdRx_ai5tfTxkpLcdwXJO31Z8V750shnYMzdztw5jiWMUyo6-w3O6AQ/w485-h332/DSC_0103.jpg) |
ঠাকুরদালান |
উঠোনে দাঁড়িয়ে আছি। তার তিন দিকে ছোট ছোট ঘর। সম্ভবত কোনওটা ছিল রান্নার, কোনওটা ছিল ভাঁড়ারের, কোনওটা দাস-দাসীদের থাকার। আর দক্ষিণ কোণে কাছারি বাড়ি।
‘জলসাঘর’-এর শুটিংয়ের সময় তারই দো'তলায় নাকি আস্তানা ছিল ছবি বিশ্বাসের। সন্ধে হলে তিনি সেখানে পানীয় নিয়ে ‘একলা’ হতেন। কাছারি বাড়িরও দো'তলায় ছাদ বলতে কিছু নেই। একতলায় বিরাট বিরাট ফোকর। তারই ফাঁক দিয়ে বাইরের আলো হামলা চালাচ্ছে ভেতরের অন্ধকারে।
চপলা দেবীকে বলেই ফেললাম, এই হাল কেন বলতে পারেন?
তাতে যা বললেন, তার মধ্যে পুরনো কাসুন্দি ছাড়া কিছুই নেই।
শরিকি গল্পের সাবেকী সাতকাহন।
বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসছি, এক পাশে একটা পুরনো আমলের ভাঙ্গাচোরা গাড়ি পড়ে আছে দেখলাম। শুনলাম সত্যজিৎ রায়ও নাকি এই গাড়ি চড়েছিলেন! এখন তা’ও লতাপাতার দখলে।
সবটা জুড়ে কেমন অপার মালিন্য রাজ করে চলেছে!
'জলসাঘর'-এ গানের আসরে দুর্গা বাঈয়ের গাওয়া গানটা মনে পড়ে যাচ্ছিল, ‘‘ভরি ভরি আয়ি মোরি আঁখিয়া।’’
নাচমহল নেই। ঝাড়বাতি নেই। সারেঙ্গীর আওয়াজ তো কোন ছাড়।বাঈয়ের গান, নূপুরের শব্দ, আতরের খুশবু, রঙিন জলের ফোয়ারা কিচ্ছু নেই। কিচ্ছু নেই।
একদা এই ভালোবাসার রাজপ্রাসাদে, আজ আছে শুধু অন্ধকার।
মুখোমুখি বসিবার।
শেষ
অঙ্কন: শান্তনু সেন
১ম পর্ব পড়ার জন্য
![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEiwtrJOGqlV46cLE-a5lHHr_p17hHc-dV6fm_4MVjlRE_AaLk5go0zrrhzBgTxew20DvBXUsKGRLZ8jqK_I83TYF406MFxWOkW-nl5KWSKOd7o20VnrssIChKjPLK-xJxwe7OiPBCRAyRA/w506-h327/DSC_0091.jpg) |
শ্রীহীন ঠাকুরদালান |
(সম্পাদকের নোটঃ ২০১৭ সালে আনন্দবাজার পত্রিকা-য় ইস্তফা দেওয়ার পর ক’টা মাস ‘উত্তরবঙ্গ সংবাদ’ নামের একটি কাগজে কাজ করতাম। তখন ‘উত্তরপর্ব’ বলে একটি ক্রোড়পত্র তৈরি করি। এই নিমতিতার রাজবাড়ি নিয়ে লেখা করতে তখন সৌমেন জানাকে ওখানে পাঠাই। ও ঘুরে এসে যে লেখা দেয়, তা আমিই সম্পাদনা করে প্রকাশ করি ‘উত্তরপর্ব’য়। এই লেখাটি বহুলাংশেই সেই সম্পাদিত প্রতিবেদনের অনুসারী। এটি আবার আমরা আমাদের আর্কাইভ-এর কথা ভেবেই এখানে রাখলাম।
-দেবশঙ্কর মুখোপাধ্যায়)
![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjLuSvnWq3sCUbOEHlBQph93P6iK7ce4byeHG9rjqIW0h-y5W1B0YVrQDGYbwEjnZj01S0MQPTBijDTBkLhBpyN5GqA5TDd8VH6PZCYWwQ6nfdUoGzvuN8epdTNqbgR9bXrXIGVihwDIeY/s320/DSC_0210.jpg) |
ভগ্ন দেওয়ালে আগাছার আস্তানা | |
আমাদের ব্লগে প্রকাশিত আরও লেখা
No comments:
Post a Comment