![]() |
হায়দরাবাদে সেভেন টুম্বস-এ মহম্মদ হাবিব |
দাদা হাবিবকে ধরিয়ে দিলেন ভাই আকবর কেন কীভাবে পর্ব ৩
![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEj-Q9Xymzw935spVBKImjLaNz8RIGnbVA5bXk7tuKCxCAYIxwWxhsOTC7pqHdJ7xb1TEP5q2VXr0Cye_CO1xrREbSczwift7-WH1eSz0T75_0W16BQUQkoXS7eyBZVRkjE9dZVDjNhDTF0/s780/Supriyo+Mukherjee+3.jpg)
সুপ্রিয় মুখোপাধ্যায়
ক্রীড়া সাংবাদিক
কী কনট্র্যাডিকশন ভাবুন!
যে মানুষটি প্রথম দর্শনে হুড়োতাড়া করে অতিথি ভাগাতে বসেছিলেন, পরে তিনিই আবার চার তলায় ডেকে নিতেন। বাইরে বেরিয়ে সামনের রক, কী রাস্তাতেও চলতে ফিরতে ইন্টারভিউ দিলেন!
কিন্তু সেদিন ১৭ সেকেন্ডে গোলের ঐতিহাসিক প্ল্যানারকে দেখলাম, একতলা থেকে সিঁড়ি ভেঙে তিনতলায় নিজের ফ্ল্যাটে উঠতে ১৭ মিনিটেরও বেশি লেগে যাচ্ছে। সময়ের থাবা সম্রাটকেও ছাড়ে না।
তবে ওঁকে বাইরে বার করার ব্যাপারটা অত সহজ ছিল না।
গাড়িতে দশ মিনিট। হায়দরাবাদের অন্যতম দ্রষ্টব্য সেভেন টুম্বস্। উৎপল বলল, ‘‘ছবিটা ওখানে তুললে ভাল হত না?’’
বেঁকে বসলেন মিঞা।
‘‘ঘরেই যা ছবিটবি নেবে নাও না। বাইরে মুসকিল আচে।’’
অনেক কষ্টে, বহু কথা চালাচালির পর শেষমেশ রাজি হলেন। ভাই আকবর সমেত প্রথমে ‘সেভেন টুম্বস’। ষোড়শ শতাব্দীর হায়দরাবাদ শাসক কুতুব শাহি বংশের সাত রাজার সাত সমাধিস্থল। তারপর তার থেকেও বেশ অনেকটা দূরে গোলকুন্ডা ফোর্ট।
ফটো শ্যুট চলছে।
তার ফাঁকে ফাঁকেই ঝিলিক দিতে লাগল পুরনো দাপটা। হারানো জৌলুস। চাপা পড়া গরিমা।
একটু বেড়ে খেললাম একবার। বললাম, ‘‘এখন খেললে পারতেন, দেশের প্রায় সমস্ত বিপক্ষ দলের বড় বড় চেহারার নানান বিদেশি ফুটবলারদের আটকাতে?’’
ফোঁস করে উঠলেন বড়ে মিঞা।
‘‘আরে ধুর! কসমস ম্যাচে পেলেকে ক’বার আটকে দিয়েছিলাম, মনে আছে? আর এদের! ধুর ধুর।’’
এককালে ময়দান ফুঁড়ে ফেলা মানুষটি তাঁর জীবনের মাঝবেলা পেরিয়েও এ ভাবে যেমন ফুটন্ত, তেমনই মিইয়ে গেলেন যেন সাম্প্রতিক ফুটবলের খুঁটিনাটি খবরে!
সে বছর মোহনবাগান তাদের প্রথমবার আই লিগ জিতেছে!
বললাম, ‘‘জানেন তো?’’
হাঁ করে চাইলেন।
তখন কেমন ‘সবুজ দ্বীপের রাজা’র মতো লাগল তাঁকে!
গুহাবাসী সন্ন্যাসী নয়, এক্কেবারে অন্য গ্রহের কেউ বুঝি!
‘‘কাগজ-টাগজ এখন সেভাবে রোজ পড়া হয় না! ঠিক জানতাম না।’’
শুনে আমি তো বটেই আমার সঙ্গী ফটোগ্রাফার উৎপলও ছবি তোলা-টোলা থামিয়ে ভ্যাবলা হয়ে তাঁর দিকে তাকিয়ে!
বলে কী?
হাবিব-সংস্কৃতি বলতে ময়দান জানত নিখাদ সততা। নিষ্ঠা। পাক্কা পেশাদার। আজ কলকাতা ময়দান থেকে দেড় হাজার কিলোমিটার দূরে বসে সেই হাবিবের নিজেরই হয়তো এখন মনে হয়, এই হাইটেক যুগে ডায়নোসরের মতোই তিনি! তাঁর সব ক’টা অধ্যায় বুঝি ধূসর পান্ডুলিপির ঝুরঝুরে পাতা বই তো নয়!
হাইটেক সিটিতে বসেও তাঁর উদাস চোখে বেদনার প্রলেপ চোখে পড়ল।
আহত। দলছুট। স্মৃতিতাড়িত।
শুনলাম, মোরাদনগরে মেহেদিপটনমে তাঁদের আদিবাড়িটি ক’বছর আগে বিক্রি হয়ে গিয়েছে। যে বাড়িতে বড় হয়েছেন তাঁরা পাঁচ ভাই। ছোটবেলা থেকে দাদা আজম আর মইনের ক্যারিশমা দেখতে দেখতে কৈশোর পেরিয়েছেন ওখানেই। ও বাড়িই ছিল এককালে তাঁর স্বপ্নের আঁতুড়ঘর।
আজ এই মাল্টি-স্টোরিড ফ্ল্যাটটার সঙ্গে সে বাড়ির গন্ধ, মানুষজন, তাঁদের চলাফেরা, আদবকায়দা সব, সবতেই বিশাল বিশাল ফারাক।
ফারাকের কথা পাড়লেই জীবন আর মাঠ-ময়দান যেন এক হয়ে ব্যথাতুর স্বরে বাজে সম্রাটের কানে!
বড় বেদনার মতো...
(চলবে)
ছবিঃ উৎপল সরকার ও সংগৃহীত
২য় পর্ব পড়তে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন
![]() |
১৯৭৭। ২৪ সেপ্টেম্বর। ইডেনে নিউইয়র্ক কসমস বনাম মোহনবাগান ম্যাচে ফুটবলসম্রাট পেলেকে আটকাচ্ছেন মহম্মদ হাবিব (১০ নম্বর জার্সি, পিছন ফিরে) |
![]() |
হায়দরাবাদের মেহেদিপটনম-এর বাড়ির গেটের সামনে বড়ে মিঞা |
৪র্থ পর্ব পড়তে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন
No comments:
Post a Comment